হযরত সুরেশ্বরী কিবলা কা’বার সংক্ষিপ্ত জীবনী (সুরেশ্বরী দরবার শরীফ)
হযরত গাউছেআজম শাহানশাহে বাগদাদী (রহঃ) ও হযরত খাজায়ে খাজেগা শাহানশাহে চিশ্তী আজমেরী (রহঃ) রূহানীয়াত কর্তৃক প্রজ্জ্বলিত অনির্বাণ প্রদীপ ও হযরত এবনে আরাবী প্রকাশিত তৌহীদের জ্ঞানধারা হযরত জালাল উদ্দিন রুমী (রহঃ) হযরত ফরিদউদ্দিন আত্তার (রহঃ) এবং হযরত বু-আলী শাহ্ কলন্দর (রহঃ) ও হযরত শামছে তাবরেজের রূহানী- বাঁশরী এবং ইসলামী তাছউফ সাগরের মহামূল্য রত্নরাজী আহরণকারী ডুবুরী হযরত খিজির (আঃ)-এর ছিনার ইলমে লাদুনী লাভকারী আউলীয়া কুল-গৌরব রবি হযরত মাওলানা শাহ্ আহমদ আলী ওরফে হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী কিবলা কা’বা কুদ্দুছুছ র্ছিরাহু হযরত শাহ সূফী মেহেরউল্লাহ্ (রহঃ) এর ঔরসে বাংলা ১২৬৩ সনে ২রা অগ্রহায়ণ ভূমিষ্ঠ হয়ে ধরাকে ধন্য ও সুরেশ্বরকে তীর্থভূমিতে এবং সুরেশ্বরের মাটিকে খোদা প্রেমিকগণের চোখের সুরমাতে পরিণত করেছেন। এ সুরেশ্বর গ্রাম আধ্যাত্বিক রাজ্যেও কুতুবুল এরশাদ হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী কিবলা কা’বা (রহঃ) আগমনে জগতে প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। সুলতানূল আউলীয়া, কুতুবুল এরশাদ হযরত শাহ সূফী মাওলানা আহমদ আলী ওরফে হযরত মাওলানা জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী নূরোল্লাহে (রহঃ) সর্বত্র আপামর জনসাধারণের নিকট হযরত সুরেশ্বরী নামেই সুপরিচিত ও প্রখ্যাত হয়ে আছেন।
বেলায়েত গগণের মধ্যাহ্ন সূর্য হযরত সুরেশ্বরী কিবলা কা’বা (রহঃ) পিতা হযরত শাহ্ সূফী মেহেরউল্লাহ্ শরীফ (রহঃ) দেশ-দেশান্তরে সূফী সাহেব নামে প্রখ্যাত ছিলেন। কঠোর রেয়াজতকারী সাধক হযরত সূফী সাহেব সর্বত্র আবালবৃদ্ধ বণিতার নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি ছিলেন এবং এখনও মানুষ তাঁকে অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। কথিত আছে, সূফী সাহেবের গাভী অপরের ক্ষেতের গাস বা ফসলাদি ভক্ষণ করলে, তিনি তিন দিন যাবত ঐ গাভীর দুগ্ধ পান করতেন না এবং পরিবারের কাউকেও তা পান করতে দিতেন না। গাভীর দুগ্ধ দোহন করে যার ক্ষেতের ঘাস বা ফসল খেয়েছে তার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি অত্যন্ত সাধারণ আহার করতেন, সারা জীবন তিনি এক প্রকার ব্যঞ্জন দ্বারা আহার করেছেন! এ সূফী সাধক ১১০ মতান্তরে ১২০ বৎসর বয়সে এন্তেকাল করেন।
জনাব কাজী শুকুর সাহেবের কন্যা হযরত সুরেশ্বরী কিবলা কা’বার আম্মা সাহেবা অতিশয় ধর্মপরায়ণা ও আদর্শস্থানীয়া নারী-কুল গৌরব ছিলেন। যে মহিয়ষী নারী বেলায়েত গগণের পূর্ণ চন্দ্র; মারেফত রাজ্যের কুতুবুল এরশাদ নূরে এলাহীর চিরোজ্জ্বল প্রদীপকে গর্ভেধারণ করেছেন, তাঁর আম্মা সাহেবা অভূতপূর্ব স্বপ্ন দর্শন করতেন। একবার হযরত মাওলায়ে দো’আলম নবী সম্রাট বিশ্বনবী হযরত রাসূলে করীম (সাঃ) স্বপ্নে তাঁকে দর্শন দান করে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের “কুতুবুল এরশাদ” হওয়ার সুসংবাদ প্রদানে তাঁকে দোজাহানের সৌভাগ্যরাণী করেছিলেন। হযরত সুরেশ্বরীর আম্মা সাহেবা বলেছেন- স্বপ্নে আমি প্রায়ই অলী-আল্লাগণকে আমার গর্ভস্থ সন্তান সম্পর্কে খোশ-খবরী প্রদান করতে দেখতাম ও শুনতাম। আকাশের পূর্ণ চন্দ্র আমার গর্ভে উদয় হতে দেখতাম। তিনি আরো বলতেন আমি স্বপ্নে বড় বড় আউলীয়া কেরামগণকে দর্শন করতাম।
আধ্যাত্বিক জগতের কুতুবুল এরশাদের সুউচ্চ মহানতম আসনে সমাসীন, বেলায়েত গগণের সূর্য মাহবুবে ছোবহানী, সুলতানে আউলীয়া হযরত শাহ সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) তৎকালে রূহনী বা আধ্যাত্মিক আলো বিতরণ দ্বারা মূর্দাদেল জেন্দা ও খোদার সাথে মানবাত্মার সম্পর্ক স্থাপন করে দিচ্ছিলেন। তৎকালে এ অলী-আল্লাহর প্রসংসার কাহিনী সর্বত্র ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। হযরত সূফী সাহেব কিবলার আধ্যাত্বিক শক্তি ও কেরামতের কথা শুনে হযরত সুরেশ্বরীর (রহঃ) অন্তর তাঁর প্রতি ভক্তি, বিশ্বাস ও প্রেমনুরাগে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এ আকর্ষণ এত তীব্র হয়ে ওঠে যে- হযরত সুরেশ্বরী অত্যন্ত ব্যাকুল হৃদয়ে কলিকাতার মেহেন্দীবাগে হযরত সূফী সহেব কিবলা কা’বার খেদমত শরীফে উপিস্থিত হয়ে জীবনের সব কিছু তাঁর কদম মোবারকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করে ভক্তি ও বিনয়ের বাস্তব মূর্তিরূপে দন্ডায়মান হয়ে হৃদয় বিগলিত অশ্রুধারায় বুক ভাসাতে লাগলেন। হযরত সূফী সাহেব কিবলা কা’বা কিছুক্ষণ তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করে অন্তর দৃষ্টি দিয়ে তাঁর সারা জীবনের পাতা বা লাওহে মাহফুজের লেখনী পাঠ করে তাঁর নিকটে বসতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর সূফী সাহেব কিবলা তাঁকে স্বীয় মুরীদরূপে গ্রহণ করে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তাঁর আকাংখিত ও যোগ্য পাত্রকে ফায়েজ প্রদান করলেন। মোর্শেদের প্রথম দিদার বা দর্শনেই হযরত সুরেশ্বরী (রহঃ)-র জীবনের গতিধারা সম্পূর্ণভাবে বদলিয়ে গেল।
মুর্শিদ কিবলার খেদমতে উপস্থিত থেকে কল্পনাতীতভাবে হযরত সুরেশ্বরী তাঁর মুর্শিদ কিবলার সীমাহীন মারেফতের ভান্ডার আত্মস্থ করে নিচ্ছিলেন। “আউলীয়াকেরামের খেদমতে একটি মূহুর্ত ঈমানের সাথে অতিবাহিত করলে এক শত বৎসরের বেরিয়া এবাদত হতেও উত্তম ফল লাভ হয়” মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহঃ)-র বাণীর পরিপূর্ণ বাস্তবরূপ হযরত সুরেশ্বরী তাঁর পীর সাহেবের খেদমত শরীফে থেকে অর্জন করেছিলেন। ছাত্র জীবনেই তাঁর পীর সাহেবের কৃপায় “লাদুনী ইলমের” দরওয়াজা তাঁর জন্য উম্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি তাঁর পীর সাহেব কিবলার প্রতি ভক্তি, খেদমত ও মহব্বত দ্বারা করুণা প্রাপ্ত হয়ে অতিশয় দ্রুত মারেফত জগতের উচ্চ স্তরের মঞ্জেল ও মর্তবাসমূহ অতিক্রম করে গাউছিয়াত ও কুতুবিয়াতে এরশাদ মোকামের অধিকারী হয়েছিলেন।
একদা হযরত সুরেশ্বরী (রহঃ) স্বীয় মোর্শেদ কিবলা হযরত কুতুবুল এরশাদ শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রহঃ) কদম বুচি ও দর্শন লাভের আকাঙ্খায় মেহেন্দীবাগ আস্তানা শরীফের দিকে রওয়ানা হলেন। যাওয়ার পথে স্বীয় পীর সাহেব কিবলার খেদমতের জন্য সুপক্ক সুবাসপূর্ণ একটি বড় পেয়ারা ও কিছু মিষ্টি ক্রয় করে প্রেমিক তাঁর প্রেমাস্পদের খেদমত শরীফে হাজির হলেন। মাহবুবও অনেক দিন পর তাঁর আশেকে সাদেককে দেখে পরমানন্দ প্রকাশ করলেন। পেয়ারাটি তিনি আনন্দিত চিত্তে হস্ত মোবারকে গ্রহণ করলেন। অতঃপর অত্যন্ত আগ্রহের সাথে পেয়ারাটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলেন এবং মুখে বলতে লাগলেন “আমার সারা জীবনের সঞ্চিত বাতেনি নেয়ামত তোমাদের মধ্যে উপস্থিত কোন ব্যক্তির অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাচ্ছে”। উপস্থিত জ্ঞানীগণ বুঝতে পারলেন, এ খোশ খবরটি তিনি তাঁর প্রিয় মূরীদ হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীকে লক্ষ্য করেই বলেছেন।
গঞ্জেমাগফীর অধিকারী কোতবে আউলীয়া, কুতুবুল এরশাদ তাছাররোপের অধিকার প্রাপ্ত ছাহেবে বেলায়েত হযরত শাহ্ সূফী সাইয়েদ ফতেহ্ আলী ওয়াইসী কুদ্দুছুছছিররাহু তাঁর নয়ন মণি প্রিয়তম মুরিদ হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহঃ) কে সঙ্গে নিয়ে হুজরা শরীফে প্রবেশ করে বহুক্ষণ তথায় অবস্থান করলেন এবং আল্লাহ্র গুপ্ত তত্ত্বের বা মারেফতে এলাহীর দুয়ার তাঁর সম্মুখে উম্মুক্ত করলেন। বেলয়েতে পরিপূর্ণ করে কুতুবুল এরশাদের মর্তবা দান করে বললেন বাবা জানশরীফ, আজ থেকে তোমার নাম রাখলাম আহ্মদ আলী। কেননা আল্লাহ পাক তোমাকে এ নাম প্রদান করেছেন, তাই আমি এ নামেই তোমাকে সম্মোধন করব।
আধ্যাত্মিক বা রূহানী জগতে ‘ওয়াইসীয়া’ ত্বরীকা নামে একটি ত্বরীকা আছে এবং অতি অল্প সংখ্যক আউলীয়া তা লাভ করতে পারেন। এটা শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার এনায়েত, ফজল ও রহমতময় দান দ্বারা লাভ করা যায়। এটা সম্পূর্ণ আজলী ও তাকদিরী রূহানী সম্পর্ক। তাদেরকে হযরত রসূল করিম (সাঃ) স্বীয় দয়া ও দানের কোলে কারও উছিলা ব্যতীত প্রতিপালন করেন। যেমন হযরত ওয়াইসকরণী (রহঃ) ও হযরত রসুলে করিম (সাঃ) এর সম্পর্ক, এটা অতিশয় উচ্চতম মোকাম। হযরত কুতুবুল এরশাদ সুরেশ্বরী কিবলা কা’বা (রহঃ) এ মোকামের অধিকারী ছিলেন। ওয়াইসীয়া ত্বরীকা অনুসারে তিনি কয়েকজন নবী ও আউলীয়ার রুহানীয়াত দ্বারা প্রতিপালিত হয়েছেন। খোদা প্রদত্ত এ অপরিসীম রূহানী ক্ষমতা আউলীয়াগণের অমরত্বের মহিমাময় পরিচয়।
এ আশেকে এলাহি আরেফবিল্লাহর সারাজীবনকাল কঠোর রেয়াজত বা কৃচ্ছ সাধনায় অতিবাহিত হয়েছে। তাঁর কঠোরতম আধ্যাত্মিক সাধনার বর্ণনা দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তবে, এ কথা ধ্রুব সত্য যে, খোদাপ্রেমিক অলী আল্লাহগণ খোদার নিকট নিগুঢ় রহস্যময় এমন এক আধ্যাত্মিক জতগতের অধিবাসী যে, তাঁদের সাধনা সম্পর্কে বাহ্যদর্শী পার্থিব সম্পর্ক একমাত্র আল্লাহ্ পাকই অবগত ও অবহিত।
হযরত সুরেশ্বরী কিবলা কা’বার খেদমত শরীফে যারা মুরীদ হতে আসতেন, তিনি তাঁর রুহানী ক্ষমতা দিয়ে তাদের কলবের কালিমা মুছে ফেলে, তাদের হৃদয়ে ইস্কে এলাহির আগুন প্রজ্জ্বলিত করে তাদের মুর্দা কলবকে জিন্দা করে বেলায়েত তথা কামলিয়াতের সকল স্তর পার করে দিতেন। তাঁর সময় কালে তাঁর মুরীদদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের হাল প্রকাশ পেত যা অন্য কোন পীর সাহেবগণের মুরীদদের মধ্যে পরিলক্ষিত হতো না। তিনি অগণিত লোকের মুর্দা কলব খোদা প্রেম এবং জিক্রে এলাহির নূর বা তাছির বিতরণ করে জিন্দা করে দিয়েছেন এবং এটাই তাঁর শ্রেষ্ঠ কারামত। এ মহান আউলীয়া থেকে অসংখ্য কারামত প্রকাশ পেয়েছে যা বর্ণনা করার জন্য আলাদা একটি গ্রন্থ প্রয়োজন।
হযরত সুরেশ্বরী মোজাদ্দেদিয়া ত্বরীকায় মুরীদ হয়ে ছিলেন কিন্তু অন্যান্য বহু ত্বরীকার বিশেষতঃ চিশ্তীয়া ও কাদেরীয়া ত্বরীকার এমামগণের সাথে তাঁর খাছ নেছবতে কামেল ছিল। তাঁর নিকট কেউ মুরীদ হতে আসলে তার কলবের অবস্থা দেখে কাউকে মোজাদ্দেদিয়া, কাউকে চিশ্তীয়া অথবা কাদেরীয়া এবং কাউকে সাজলীয়া কিংবা কলন্দরীয়া ত্বরীকায় মুরীদ করতেন এবং বলতেন “বাবা আমি তোমাকে অমুক ত্বরীকায় মুরীদ করে ঐ ত্বরীকার ফায়েজ দিচ্ছি।” সে ব্যক্তি হতে ঐ ত্বরীকার ফায়েজই প্রকাশ পেত।
হযরত সুরেশ্বরী কিব্লা কা’বা (রহঃ) ১৯ শে মাঘ থেকে ২১শে মাঘ পর্যন্ত উরস শরীফের দিন তারিখ ধার্য করে তিনি স্বয়ং তা আজীবন প্রতি পালন করে গেছেন। বাংলাদেশের অন্যান্য র্উস শরীফের মত এ র্উস শরীফে জীব-জন্তু জবেহ করা হয় না । ভাত ও নিরামিষ দিয়ে এই উরস শরীফে তবরক বা খানা প্রস্তুত করা হয়। প্রকাশ থাকে যে ৫ই পৌষ থেকে ২১ শে মাঘ পর্যন্ত সুরেশ্বর দরবার শরীফের সীমানার অভ্যন্তরে কোন জীব-জন্তু জবেহ করা হয় না ।
একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সুরেশ্বর দরবার শরীফে উরস মোবারক শুরু হয়। ১৯শে মাঘ মাগরিবের নামাজের ঠিক পর পরই ৫টি পবিত্র গায়েবী “আশা-মোবারক” বের করা হয়। এ আশা-মোবারক বের করার সাথে সাথেই এক অলৌকিক তাৎপর্য ও মহিমামন্ডিত হয়ে র্উস শরীফ শুরু হয়। ফায়েজের বন্যা তখন এমন ভাবে প্রবাহিত হয় যে, ভক্ত হৃদয়ের আকাশ ফাটা কান্না ও জিকিরের শব্দ বহু দুর-দুরান্ত থেকে শুনা যায়। হযরত সুরেশ্বরী কিব্লা এ পাঁচটি পবিত্র গায়েবী “আশা-মোবারক” তাঁর মুর্শিদ কিবলার মাজার শরীফ থেকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। পাঁচটি আশা-মোবারকের মধ্যে স্বর্ণ মুকুট পরিশোভিত সর্ববৃহৎ আশা-টি বিশ্বনবী হযরত রাসূলে করিম (সাঃ), দ্বিতীয় আশা-টি হযরত মুসা (আঃ), তৃতীয় আশা-টি হযরত বড় পীর সাহেব (রহঃ) চতুর্থ আশা-টি হযরত খাজা বাবা গরীব নেওয়াজ (রহঃ) এবং পঞ্চম আশা-টি হযরত মোজাদ্দেদ আল-ফেসানী (রহঃ) তরফ থেকে পেয়েছিলেন।
হযরত সুরেশ্বরী কিব্লা (রহঃ) “দ্বায়রায়ে আহ্মদিয়া” নামে একটি দ্বায়রা শরীফ স্থাপন করেছেন। এ দ্বায়রা শরীফের অভ্যন্তরে একটি কোঠায় পাঁচটি আসন সংরক্ষিত আছে। এ পাঁচটির মধ্যে একটি বাদশাহী তখ্তের অনুরূপ বৃহদাকার আসন রয়েছে। এ আসনটি সর্ব শ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী হযরত রাসূলে করিম মোহাম্মদ (সাঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত ঈশা (আঃ) এবং হযরত দাউদ (আঃ) এর রূহানীর সাথে সম্পর্কিত। বাকী চারটি আসন হযরত বড় পীর গাউছেল আযম মাহবুবে সুবহানী শায়েখ আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ) , গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা ময়নুদ্দীন চিশ্তী (রহঃ) হযরত শেখ আহ্মদ সেরহিন্দী ইমামে রাব্বানী মোজদ্দেদে আল-ফেছানী (রহঃ)-এর সাথে রূহানী সম্পর্ক যুক্ত। এ ছাড়াও হুজরা শরীফের সাথে হযরত সুলতানে বেলায়েতে বাংলা বাবা শাহ্ জালালউদ্দিন ইয়ামানী (রহঃ) ও হযরত শাহ্ বদীউদ্দিন মাদার (রহঃ) ও হযরত শাহ্ বু-আলী কলন্দর পানিপথি (রহঃ) রূহানী সম্পর্ক বিদ্যমান। পাঞ্জেতন পাকের সাথেও হুজরা শরীফের একটি বিশেষ রূহানী সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
রওজা শরীফের পূর্ব দিকে বৃহদাকার পাথর পরিলক্ষিত হয়। এ পাথর দু’টি অতিশয় ক্ষুদ্রাবস্থায় হয়রত শাহ্ আরেফীন (রহঃ) মাজার শরীফ হতে হযরত সুরেশ্বরী (রহঃ) আনয়ন করে এখানে স্থাপন করেন। উল্লেখ্য যে ক্ষুদ্রাকার পাথর দু’টি ক্রমশঃ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে বৃহদাকার ধারণ করেছে।
হযরত সুরেশ্বরী কিব্লা বাংলা এবং উর্দ্ধু ভাষায় মোট ১৩ (তের) খানা কিতাব রচনা করেছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে বাবা সুরেশ্বরী কিব্লা প্রায়ই রাতের অন্ধকারে কোনরূপ বাতি ছাড়াই তাঁর কিতাব এর পান্ডুলিপি লিখে যেতেন। কাগজের উপর কলম চালানোর খশ-খশ শব্দ শুনে অন্যেরা তা বুঝতে পারত। তাঁর রচিত কিতাব এর মধ্যে “নূরেহক্ব গঞ্জেনূর”, “ছফিনায়ে ছফর”, “কাওলুল কেরাম”, মদিনা কল্কি অবতারের ছফিনা”, “র্সিরেহক্ব জামেনূর”, “লতায়েফে শাফিয়া”, “আইনাইন”, মাতলাউ’ল উ’লুম” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
‘বাংলা ১৩২৬ সনের ২রা অগ্রহায়ন সন্ধ্যা ৫টা ৩০ মিনিটে ৬৩ বৎসর বয়সে এ মহান আউলীয়া চৌদ্দশতকের মোজাদ্দেদ গাউছেআলম পীরেকামেলের পথপ্রদর্শক কুতুবুল এরশাদ ছাহেবে বেলায়েত নূরেছুদুর হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী (রহঃ) অগনিত ভক্তমূরীদান রেখে বেছালে হক্ব প্রাপ্ত হন।
হযরত সুরেশ্বরী (রহঃ) বেছালেহক্ব প্রপ্তির পূর্বে তাঁর জ্যৈষ্ঠ পুত্র হযরত মাওলান নূরী শাহ্ (রহঃ) কে খেলাফত দান করে দরবারে সুলতানুল আউলীয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের গদিনশীন স্থলাভিসিক্ত করেন। হযরত সুরেশ্বরী (রহঃ) বেছালেহক্ব প্রাপ্তির পর হযরত মাওলানা নূরী শাহ্ (রহঃ) জাহেরে বাতেনে অতিশয় যোগ্যতার সাথে পিতার ত্বরিকার ব্যাপক প্রচার ও অত্যন্ত প্রসংশনিয়ভাবে দরবার শরীফের তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা করেন। বাংলা ১৩৬০ সনের ২০ শে মাঘ উরস শরীফ উপলক্ষে হযরত নূরী শাহ্ (রহঃ) বাবা সুরেশ্বরী কিবলা (রহঃ) বিশিষ্ট ভক্তগণের মাঝে শোভা পাচ্ছিলেন। এহেন সময় স্বয়ং হযরত সুরেশ্বরী কিবলা (রহঃ) বাতেনী নির্দেশে হযরত নূরী শাহ্ (রহঃ) তাঁর স্নেহশিক্ত মেঝপুত্র হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী জালাল নূরী (রহঃ) কে বাবা সুরেশ্বরী কিবলা (রহঃ) বেলায়েতের ভান্ডার, বেলায়েতের বন্টনকারী ও দরবারে সূলতানুল আউলীয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের গদীনশীন বলে ঘোষণা করেন। ১৩৬১ সনের ৫ই ভাদ্র দুপুর ২.৩০ মিনিটে ৬২ বৎসর বয়সে হযরত মাওলানা নূরী শাহ্ (রহঃ) বেছালে হক্ব প্রাপ্ত হন।
বাবা সুরেশ্বরী কিবলা (রহঃ) রূহানীয়াত কর্তৃক প্রজ্জ্বলিত ও প্রতিপালিত বেলায়েত গগণের প্রদীপ্ত সূর্য হযরত শাহ্ সূফী জালাল নূরী (রহঃ) পিতার বেছালেহক্ব প্রাপ্তির পর জাহেরে বাতেনে অতিশয় যোগ্যতার সাথে দরবার শরীফের পরিচালনা ও বাবা সুরেশ্বরী (রহঃ) ত্বরিকার ব্যাপক প্রচার-প্রসার ও দরবার শরীফের উন্নয়ন সাধন করেন। বাংলা ১৪০৬ সনের ২৫ শে ফাল্গুন রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮ ঘটিকায় এ মহান অলি-আল্লাহ্ অসংখ্য ভক্তমূরীদান রেখে ৭৯ বৎসর বয়সে বেছালেহক্ব প্রাপ্ত হন।
(সংগৃহীত)